পিতা-মাতা মানুষের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনন্য রহমত। তাদের ছাড়া এই পৃথিবী অকল্পনীয়। শৈশব থেকে আমাদের আদর যত্নদিয়ে তারা লালন-পালন করেন। বাবা-মা সর্বদা সন্তানের কল্যাণের কথা ভাবেন। তাই মহান আল্লাহর কাছে মা-বাবার মর্যাদা অতুলনীয়। কিন্তু বার্ধক্যে বেশির ভাগ সন্তান বাবা-মাকে অবহেলা করে। কারণ তখন তাদের উপার্জনের ক্ষমতা থাকে না, সন্তানের ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। মহান আল্লাহ বার্ধক্যে বাবা-মায়ের সাথে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আমি মানুষকে তার মা-বাবার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি। কেননা, তার মা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। আমি আরো নির্দেশ দিয়েছি, আমার প্রতি ও তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে তোমাদের আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে’ (সূরা লোকমান-১৪)। মহান আল্লাহর ইবাদত ও বাবা-মার সন্তুষ্টি একে অপরের পরিপূরক। তাই আল্লাহর হুকুম পালনের পাশাপাশি বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। বাবা-মাকে অবহেলা করে আপনি যতই ইবাদত করুন না কেন, মহান আল্লাহর কাছে এ ইবাদত গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। অর্থাৎ বাবা-মা আপনার প্রতি অসন্তুষ্ট হলে সব ইবাদত নষ্ট হয়ে যাবে। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)। মা-বাবার সেবা-যতেœ জান্নাতের পথ সুগম হয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ারও অন্যতম মাধ্যম বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন করা। হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘বাবা-মায়ের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। আর বাবা-মায়ের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে’ (তিরমিজি-১৯০৪)। রাসূলুল্লাহ সা: একদা তিনবার বললেন, ‘তার নাসিকা ধুলোয় ধুসরিত হোক!’ এ কথা শুনে সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কার ব্যাপারে এসব বদদোয়া করছেন? তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার মা-বাবা উভয়কে অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্যে উপনীত অবস্থায় পেলো তবুও সে তাদের খেদমত করে জান্নাতের পথ সুগম করতে পারল না’ (মুসলিম-২৫৫১)। বাবা-মা বিধর্মী হলেও তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইসলামবিরোধী কোনো কাজের হুকুম না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের কথা মানতে হবে। পবিত্র আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন- ‘আর যদি তারা তোমাকে আমার সাথে শিরক করতে জোর চেষ্টা করে, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তখন তাদের আনুগত্য করবে না। কিন্তু পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস করবে। যে আমার অভিমুখী হয় তার পথ অনুসরণ করবে। অতঃপর আমারই কাছে তোমাদের প্রত্যাবর্তন। তখন আমি তোমাদের জানিয়ে দেবো তোমরা যা করছিলে’ (সূরা লুকমান-১৫)। বাবা-মাকে কষ্ট দেয়া বা তাদের অবাধ্য হওয়া জঘন্যতম গুনাহ। বর্তমানে স্ত্রীর কথায় অনেক সন্তান নিজের বাবা-মায়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিয়ামতের আগে মানুষ স্ত্রীর কথা মান্য করবে এবং বাবা-মায়ের নাফরমানি করবে। বন্ধু-বান্ধবকে নিকটবর্তী করবে, বাবা-মাকে দূরে সরিয়ে রাখবে। বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তানকে মহান আল্লাহ কখনো মাফ করবেন না। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ চাইলে বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ তিনি মাফ করবেন না। আর অবাধ্য সন্তানের শাস্তি তার মৃত্যুর আগে দুনিয়াতেই দেয়া হবে’ (মিশকাত-৪২১)। একদা বনু সালামার এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার মা-বাবার মৃত্যুর পরও কি তাদের সাথে সদাচরণের কিছু বাকি থাকে?’ তখন রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘হ্যাঁ, তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করবে, মৃত্যুর পর তাদের কোনো বৈধ ওসিয়ত থাকলে সেটি পূরণ করবে, তাদের আত্মীয়স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবে আর তাদের বন্ধু-বান্ধবকে সম্মান করবে’ (আবু দাউদ-৫১৪২)। মৃত মা-বাবার জন্য এই দোয়া করতে মহান আল্লাহ বলেছেন- ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগিরা’ (সূরা বনি ইসরাইল-২৪)। তাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা নয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষ যথাক্রমে তার শৈশব, কৈশোর, যৌবনকাল অতিক্রম করার পর ধীরে ধীরে বার্ধক্যে পদার্পণ করবে। তাই আজকে যদি আপনি আপনার বাবা-মাকে অবহলো করেন, একদিন আপনার সন্তানও আপনাকে অবহেলা করবে। বাবা-মার খুুশিতে মহান আল্লাহ খুশি হয়, জীবনে বরকত আসে। মানবজীবনে সাফল্য অর্জনের চাবিকাঠিও বাবা-মায়ের সন্তুষ্টি। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে মা-বাবার সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন। লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়